ব্যস্ত জীবনে আমরা অনেকেই সময় বাঁচাতে ভরসা রাখি ফাস্টফুড, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস আর ইনস্ট্যান্ট খাবারের ওপর। খেতে সহজ, ঝামেলা কম— কিন্তু এই সুবিধার আড়ালে লুকিয়ে আছে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি। বেশিরভাগ সময় আমরা ভাবিই না, এসব খাবার প্রতিদিন শরীরের ভেতরে কী প্রভাব ফেলছে। .
সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণা জানাচ্ছে, দীর্ঘদিন এ ধরনের খাবার খেলে কোলন বা বৃহদান্ত্রের মারাত্মক রোগ, এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। বিশ্বজুড়ে কোলোরেক্টাল ক্যানসার এখন অন্যতম সাধারণ ক্যানসার। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ২৪ পুরুষের একজন এবং প্রতি ২৬ নারীর একজন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।.
চিন্তার বিষয় হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অল্প বয়সীদের মধ্যেও এই ক্যানসারের হার বাড়ছে। তাই এখনই সচেতন হওয়া জরুরি — বিশেষ করে খাবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে।.
আল্ট্রা-প্রসেসড খাবার কেন বেশি ক্ষতিকর.
স্ট্যানফোর্ড ও ইউসিএলএতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. ওয়েন্ডি লেব্রেট ২০২৫ সালে প্রকাশিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করেছেন, যা প্রকাশিত হয় জেএমএলএ অনকোলজি জার্নালে। গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত আল্ট্রা-প্রসেসড খাবার খান, তাদের কোলন পলিপস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এই পলিপস সময়ের সঙ্গে কোলন ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।.
বিশেষ করে ৫০ বছরের কম বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটি প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে। ডা. লেব্রেটের পরামর্শ—যতটা সম্ভব এসব খাবার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে কমিয়ে আনা উচিত।.
.
.
কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে যেসব খাবার.
.
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ও ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের গবেষক অ্যান্ড্রু টি. চ্যানের নেতৃত্বে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব তরুণী বেশি পরিমাণে আল্ট্রা-প্রসেসড খাবার খান, তাদের অন্ত্রে পলিপস তৈরি হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। গবেষণার ভিত্তিতে যেসব খাবার সীমিত বা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো—.
-প্যাকেটজাত বিস্কুট.
-ক্যান্ডি ও চকলেট বার.
- অতিরিক্ত চিনি দেওয়া ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল.
- আইসক্রিম.
- চিপস ও পাফড স্ন্যাকস.
- ইনস্ট্যান্ট র্যামেন.
- প্যাকেটজাত সাদা পাউরুটি.
- ফ্রোজেন ওয়াফল বা প্যানকেক.
- চিকেন নাগেটস.
- হট ডগ.
- প্রিজারভেটিভযুক্ত ডেলি মিট.
- ফ্রোজেন রেডি-মিল.
- সোডা ও এনার্জি ড্রিংক.
- প্রোটিন বার ও গ্র্যানোলা বার.
- প্রসেসড চিজ স্লাইস.
এই খাবারগুলো দেখতে সহজ ও লোভনীয় মনে হলেও, দীর্ঘদিন খেলে এগুলো অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট করতে পারে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।.
কী করলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব.
কোলন ক্যানসার হঠাৎ করে হয় না। এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে আমাদের জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে। নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত পানি পান, শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম এবং আল্ট্রা-প্রসেসড খাবার কমিয়ে আনা— এই অভ্যাসগুলোই হতে পারে বড় ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।.
যে চিপস বা সোডা আপনাকে সাময়িক আনন্দ দিচ্ছে, অভ্যাসে পরিণত হলে ভবিষ্যতে সেটাই হতে পারে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। তাই সময় থাকতে খাবার বাছাইয়ে একটু সচেতন হওয়াই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।. .
Ajker Bogura / জান্নাতুন তাজরী নীলা
আপনার মতামত লিখুন: